কিয়ামতের আলামত
১. আলামতে সুগরা বা ছোট আলামত।
২. আলামতে কুবরা বা বড় আলামত।
♦আলামতে সুগরা আবার ২ প্রকার। যথা:
১ম প্রকার আলামতে বায়ীদা বা দূরবর্তী আলামতঃ- আলামতে বায়ীদা হলো যা ইতিপুর্বে প্রকাশ পেয়েছে এবং শেষ হয়েছে। এগুলো কিয়ামত হওয়ার অনেক পূর্বেই প্রকাশ পাবে। যেমন: হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আগমন, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া এবং মদীনা হতে বড় ধরনের অগ্নিশিখা প্রকাশ পাওয়া।
২য় প্রকার মুতাওয়াচ্ছেতা বা মধ্যবর্তী আলামতঃ- মধ্যবর্তী আলামত হলো যা ইতিপূর্বে প্রকাশ পেয়েছে অথচ তা শেষ হয়ণি বরং অসংখ্য আলামতে সুগরা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন: দাসী তার মুনিবকে জন্ম দিবে, নগ্নপদ বিশিষ্ট নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা, বকরীর রাখালরা বড় বড় অট্টালিকা তৈরীর ক্ষেত্রে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করবে এবং ৩০ জন মিথ্যাবাদী দাজ্জাল মিথ্যা নবুয়ত দাবী করবে।
♦আলামতে কুবরা বা বড় আলামত : যা প্রকাশ পওয়ার পরপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। তা হলো ১০ আলামত যার একটিও এখন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি।
হযরত হুজায়ফা (রা.) বলেন, হযরত নবী করিম (সা.) আমাদের কাছে একদা উপস্থিত হলেন, এমন সময় আমরা আলোচনা রত ছিলাম। তখন হযরত রাসূল (সা.) আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কোন বিষয়ে আলোচনা করতেছ? আমরা বললাম কিয়ামত সম্পর্কে, তখন তিনি বললেন, তা ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না ১০টি আলামত প্রকাশ পাবে। অতঃপর তিনি নিম্নবর্ণিত, ১০টি আলামত উল্লেখ করলেন।
১. অগ্নিশিখা, ২. মিথ্যাবাদী, ৩. ভূগর্ভ থেকে অদ্ভুত জানোয়ারের আত্নপ্রকাশ, ৪. পশ্চিম দিগন্ত হতে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. হযরত ঈসা (আ.)-এর অবতরণ, ৬. ইয়াজুজ মাজুজের আত্নপ্রকাশ, ৭. পৃথিবীর পূর্বদিকে ভূমিধ্বস হওয়া, ৮. পৃথিবীর পশ্চিমদিকে ভূমিধ্বস হওয়া, ৯. আরব ভূখন্ডে ভূমিধ্বস হওয়া, ১০. আর সর্বশেষে ইয়ামেন থেকে অগ্নিশিখা বের হয়ে তা মানুষদের হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে।
আর কোন কোন হাদীস শরীফের মধ্যে আছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আরো তিনটি আলামত প্রকাশ পাবে। ১. হযরত মাহদী (আ.) আগমন, ২. পবিত্র কা’বা শরীফ ধ্বংস হওয়া, ৩. জমিন হতে পবিত্র কুরআন শরীফ উঠিয়ে নেওয়া।
♦আলামতে সুগরা বা ছোট আলামতসমূহ :
★প্রথম প্রকার আলামত যা সংঘটিত হয়েছে।
১. হযরত নবী পাক (সা.)-এর আগমন।
২. হযরত নবী পাক (সা.)-এর ইন্তিকাল।
৩. চন্র দ্বিখন্ডিত হওয়া।
৪. বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় হওয়া।
৫. সকল সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর ইন্তেকাল ও শাহাদাত বরণ।
৬. এক প্রকার ঘাতক ব্যাধি যথা কুয়াস যা বকরীকে মৃত্যুর মুখে নিপতিত করবে।
৭. বিভিন্ন প্রকার ফেতনা প্রকাশ পাওয়া।
৮. ব্যাপক বর্শা বা বল্লমের মতো মিডিয়ার প্রকাশ পাওয়া।
৯. সিফফিনের যুদ্ধ।
১০. খারেজী সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ।
১১. মিথ্যা নবুয়তের দাবীদারদের আত্মপ্রকাশ।
১২. মানুষের মাঝে ব্যাপক সুখ শান্তি ও ধন সম্পদের প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দের সয়লাব হবে।
১৩. হিজাজ হতে অগ্নিশিখা প্রকাশ পাবে।
১৪. তুরষ্কে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে।
১৫. অত্যাচারী লোক মানুষকে বেত বা চাবুক দ্বারা মারবে।
১৬. ব্যাপক হানাহানি হবে।
১৭. মানুষের অন্তকরণ হতে আমানতের গুরুত্ব উঠে যাবে।
১৮. পূর্ববর্তী জাতিদের অনুসরণ করবে।
১৯. দাস তার মুনিবকে জন্ম দিবে।
২০. সমাজের ইতর শ্রেণির লোক নগ্নপদ বিশিষ্ট বকরীর রাখাল বড় বড় অট্টালিকা তৈরী করার প্রতিযোগিতা করবে।
২১. মহিলারা উলঙ্গ হয়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করবে।
২২. লোকেরা বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে সালাম প্রদান করবে।
২৩. স্বামী-স্ত্রী একত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে।
২৪. ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করবে।
২৫. কিছু সংখক ব্যবসায়ী বাজারে প্রভাব বিস্তার করবে।
২৬. মিথ্যা সাক্ষীর সয়লাব হবে।
২৭. সত্য গোপন হবে।
২৮. অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে।
২৯. স্বার্থ অথবা লোভ ও কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে।
৩০. প্রতিবেশীর অনিষ্ট বৃদ্ধি পাবে।
৩১. অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাবে।
৩২. আমানতের খেয়ানত করবে।
৩৩. একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বিদায় নিবে এবং ঘাতকতা বৃদ্ধি পাবে।
৩৪. চুক্তিবদ্ধ মালকে নিজ সম্পদ মনে করবে।
৩৫. আমানতকে গনিমত মনে করবে।
৩৬. লোকেরা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের বিবেচনা করবে না।
৩৭. মানুষ যাকাত দিতে অনাগ্রহী হবে।
৩৮. মানুষ স্ত্রীর অনুগত হবে এবং পিতা মাতার অবাধ্য হবে।
৩৯. দুনিয়া পাওয়ার জন্য ইলম অর্জন করবে।
৪০. বদ্ধুকে কাছে রাখবে এবং পিতাকে দূরে রাখবে।
৪১. মসজিদে শোরগোল হবে।
৪২. ফাসেকরা নেতৃত্ব দিবে।
৪৩. আত্মিয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে।
৪৪. নিম্নশ্রেণীর লোকেরা বংশ ও সমাজের নেতা হবে।
৪৫. জুলুমের ভয়ে অপরকে সম্মান করবে।
৪৬. মানুষের সভাব হবে স্বাধীন ও একে অপরের লজ্জাস্থানকে হালাল মনে করবে এবং একে অপরকে পরোয়া করবেনা।
৪৭. পুরুষরা রেশমি পোশাক হালাল মনে করবে।
৪৮. মদ পান করা হালাল মনে করবে।
৪৯. ঢোল-বাজনাকে হালাল মনে করবে।
৫০. মানুষ তার নিজ কথা এবং কর্মের দ্বারা সকালে মু’মিন এবং বিকালে কাফের হবে।
৫১. মানুষ মৃত্যুকে কামনা করবে।
৫২. মসজিদকে অলংকৃত করা হবে এবং তা নিয়ে মানুষ গর্ব করবে।
৫৩. মানুষ তার বাসগৃহকে কারুকার্যের মাধ্যমে সুন্দর করে তুলবে।
৫৪. কিয়ামতের পূর্বে ব্যাপক বজ্রপাত হবে।
৫৫. মানুষ বেশি বেশি পুস্তক লিখবে এবং তা ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে।
৫৬. মানুষ বাচন ভঙ্গির দ্বারা অর্থ উপার্জন করবে এবং তা নিয়ে গর্ব করবে।
৫৭. পবিত্র কুরআন ছাড়া অন্য পুস্তকের সয়লাব হবে।
৫৮. ক্বারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু ফকিহ আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে।
৫৯. নিম্ন শ্রেণীর লোকের কাছে মানুষ ইলম তলব করবে।
৬০. হঠাৎ মৃত্যু হবে।
৬১. মূর্খ লোকেরা নেতৃত্ব বিস্তার করবে।
৬২. সময়ের বরকত কমে যাবে।
৬৩. নির্বোধ, মূর্খ, ত্রুটিযুক্ত লোক জনসাধারণের ব্যাপারে কথা বলবে।
৬৪. নিম্ন পেশাজীবি লোকেরা ও নির্বোধেরা অধিক ধন-সম্মপদের মালিক হবে।
৬৫. লোকেরা মসজিদকে রাস্তা বা পথ বানাবে।
৬৬. বিবাহের মহরানা প্রথমে চড়া হবে এরপর কমতি হবে।
৬৭. ঘোড়ার মূল্য প্রথমে চড়া হবে এরপর কমে যাবে বা সস্তা হবে।
৬৮. নিকটে-নিকটে বাজার হবে।
৬৯. সকল ধর্মের লোকেরা মুসলমানদের উপর আক্রমন করবে।
৭০. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হবে।
৭১. নামাজের ইমামতি নিয়ে বিতণ্ডা সৃষ্টি হবে।
৭২. মিথ্যা বৃদ্ধি পাবে।
৭৩. মানুষের মাঝে শত্রুতা বিস্তার করবে।
৭৪. অধিক পরিামাণে ভূমিকম্প হবে।
৭৫. নারী বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে।
৭৬. যেনা বৃদ্ধি পাবে এবং তা প্রকাশ্যে হবে।
৭৭. কুরআন তেলাওয়াতের বিনিময়ে উজরত গ্রহন করা হবে।
৭৮. মানুষ মোটা হবে।
৭৯. এমন লোক সাক্ষীর জন্য আগ্রহী হবে যাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হয় না।
৮০. মানুষ মান্নত করবে কিন্তু তা পূরণ করবে না।
৮১. ধনীরা গরীবের মাল ভক্ষণ করবে।
৮২. মানুষ কুরআনের বিধান ছেড়ে দিবে।
৮৩. আরবে লোক কম হবে এবং রোমে লোক বৃদ্ধি পাবে।
★দ্বিতীয় প্রকার আলামত যা এখন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি
৮৪. ধন-সম্পদ পর্যাপ্ত হবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকতা লাভ করবে।
৮৫. জমিন তার ভূগর্ভের সকল ধন-ভাণ্ডার বের করে দিবে।
৮৬. মানুষের চেহারা বিকৃত হবে।
৮৭. ভূমিধ্বস হবে।
৮৮. মিথ্যা অপবাদ মানুষ হালাল মনে করবে।
৮৯. এমন বৃষ্টি হবে যার ফলে জমিনে কোন ঘর বাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না।
৯০. বৃষ্টি হবে কিন্তু কোন ফসল হবেনা।
৯১. আরব ভূখণ্ডে ব্যাপকভাবে ধ্বংসাত্মক ফেতনা দেখা দিবে।
৯২. বৃক্ষ মুসলমানদের সাহায্যের জন্য কথা বলবে।
৯৩. কংকর মুসলমানদের সাহায্যের জন্য কথা বলবে।
৯৪. মুসলমানরা ইয়াহুদীদের হত্যা করবে।
৯৫. স্বর্ণের পাহাড় হতে সুমিষ্ট পানি প্রবাহিত হবে।
৯৬. অধম ও পাপি ব্যক্তিরা সমাজে প্রাধান্য পাবে।
৯৭. আরব ভূখণ্ড পুনরায় আবাদ হবে।
৯৮. লোভাতুর ফেতনা, আহলাসের ফেতনা প্রকাশ পাবে।
৯৯. ফড়িং বা কিটপতঙ্গের ফেতনা প্রকাশ পাবে।
১০০.বিপদের ফেতনা প্রকাশ পাবে।
১০১.মানুষ শামে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করবে।
১০২.মুসলমান ও রোমিয়দের সাথে যুদ্ধ হবে।
১০৩.কুসতুনতুনিয়া বিজয় হবো।
১০৪.মিরাস বন্টন হবে না।
১০৫.মানুষ গনিমতে খুশি হবে না।
১০৬.মানুষ পুরাতন অস্ত্র বা যন্ত্রপাতির দিকে ফিরে অসবে এবং আগের মানুষের ন্যায় আধুনিক যানবাহন ত্যাগ করে পশুর বাহনে আরোহন করবে।
১০৭.বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরায় মুসলমানরা আবাদ করবে।
১০৮.মদীনা বিরাণ ভূমিতে পরিণত হবে এবং সেখানে কেউ জিয়ারত করতে যাবে না ।
১০৯.মদীনা সকল পাপ নিঃশেষ করে দিবে যেমন হাপড় লোহার ময়লা দূর করে দেয়।
১১০.পাহাড় তার স্বস্থান ত্যাগ করবে।
১১১.কহতান বংশ থেকে একজন লোক বের হবে এবং লোকেরা তার অনুসরণ করবে।
১১২.এমন একজন লোকের উদয় হবে যাকে লোকেরা জাহজাহ বলে সম্বোধন করবে ।
১১৩.হিংস্র প্রাণী এবং জড় পদার্থ কথা বলবে।
১১৪.চাবুকের এক মাথা কথা বলবে।
১১৫.পুরুষের উরু তার স্ত্রী সম্পর্কে সংবাদ দিবে।
১১৬.কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না,যতক্ষণ পর্যন্ত সকল মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানবে।
১১৭.পাণ্ডুলিপি হতে এবং মানুষের সীনা হতে পবিত্র কুরআন উঠে যাবে বা মুছে যাবে।
১১৮.একটি দল কা’বার বিপক্ষে লড়াইতে অংশগ্রহণ করবে এবং তারা সমূলে জমীনে প্রোথিত হবে।
১১৯.জুতার ফিতা কথা বলবে।
১২০.লোকেরা হজ্জ ছেড়ে দিবে।
১২১.আরবরা পুনরায় মূর্তিপূজা শুরু করবে।
১২২.কুরাইশ বংশ শেষ হবে।
১২৩.হাবশার একজন লোকের হাতে কা’বা শরীফ ধ্বংস হবে।
১২৪.মুমিনদের রূহ কবয করার জন্য একটি পবিত্র বাতাস প্রবাহিত হবে।
১২৫.মক্কার অট্রালিকা ধ্বংস হবে।
১২৬.পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের অভিসম্পাত করবে।
১২৭.মানুষের যাতায়াতের জন্য নতুন বাহন হবে।
১২৮.ইমাম মাহাদী (আ.) আত্মপ্রকাশ করবেন।
[ছারছীনা প্রকাশনী - কিয়ামতের আলামত(পৃ:১১-১৭)]
0 মন্তব্যসমূহ