Recents in Beach

হাকালুকি হাওর | Hakaluki haor

আসমানসমূহ এবং যমীনে তিনিই আল্লাহ। তিনি তোমাদের গোপনীয় ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তিনি আরো জানেন, যা তোমরা উপার্জন কর। (সূূূূরা-আনয়াম :৩)

 হাকালুকি ২৩৮টিরও বেশি পরস্পর সংযোগকারী বিল ও জলমহল এর সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল বাস্তব্যবিদ্যা সংস্থান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো হচ্ছে চাতলা, পিলারকোনা, দুলণ্ডা, সাকুয়া, বড়জালা, বালিঝুড়ি, লাম্বা, টেকনিয়া, হাওরখাল, তুরাল, বাঘালকুড়ি এবং চিনাউড়া। 

হাকালুকি হাওর উত্তর দিকে কুশিয়ারা নদী ও সোনাই-বড়দালনদী দ্বারা, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ- কুলাউড়া রেলপথ দ্বারা এবং পূর্বদিকে কুলাউড়া বিয়ানীবাজার সড়ক দ্বারা বেষ্টিত। হাওরটি মৌলভীবাজার ও সিলেট এই দুইটি প্রশাসনিক জেলায় অবস্থিত। হাওরের চারিদিকে প্রায় ১,৯০,০০০ জন লোক বাস করে। 

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এখানে কালিবাউস, বোয়াল, রুই, ঘাগট, পাবদা এবং চাপিলা প্রভৃতি প্রধান মৎস্য প্রজাতি পাওয়া যায়। কুশিয়ারা হতে হাকালুকির বিল ও শাখাগুলোর উজানের দিকে মাছের ঘন ঘন চলাচল আছে। হাকালুকি হাওরের বিলগুলো শীতকালে মা মৎস্যদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। বর্ষার প্রথমদিকে এ সমস্ত মা মাছ ভাটির মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের জন্য লক্ষ লক্ষ মাছের পোনা উৎপাদন করে। প্লাবন সমতল ভূমিগুলোও এ অঞ্চলের মধ্যে মৎস্য সম্প্রদায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যা হোক উজানের নদী ও খালগুলো হতে আসা বালির স্তর, মাছ ধরার জন্য সম্পূর্ণ পানি শুকানোর কলাকৌশলের ব্যবহার এবং মা মাছের খাবার ও আশ্রয়ের জন্য জলজ উদ্ভিদের অভাবের কারণে বিলগুলোর অনেকগুলোই মা মাছের আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

হাকালুকি হাওরটি হচ্ছে উত্তর দিক হতে উড়ে আসা অতিথি জলচর পাখিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্রামের জায়গা। সবচেয়ে মজার প্রজাতি হচ্ছে বারহেডেড রাজহাঁস যেগুলো এখন মিঠা পানির জলাশয়ে কদাচিৎ দেখা যায়। জলচর পাখিদের আরও অনেক প্রজাতি হাওরটিকে তাদের অস্থায়ী আবাস স্থল বানিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, অবৈধ পাখিশিকার এই বিস্তীর্ণ জলাশয়ে জলচর পাখিদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতকালে খুব ভালো বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে হাকালুকি হাওর পরিচিত। হাওরের চারপাশের গ্রাম ও দরবর্তী এলাকার জনগণ তাদের গরু ছাগল বিচরণের জন্য এখানে পাঠিয়ে দেয়। এ সময়, পশুপালকেরা বিলগুলোর নিকটে অস্থায়ী আশ্রয় নির্মাণ করে এবং ৪-৫ মাস ধরে তাদের প্রাণীগুলো এখানে চড়ায়/ বিচরণ করায়। অতীতে হাওরটিতে অত্যন্ত ঘন জলাশয় বন ছিল, কিন্তু বন নিধন এবং সংরক্ষণ অভ্যাসের ঘাটতি বিগত দুই দশকে এই দুর্লভ বনকে কার্যত ধ্বংস করেছে। 

এ অঞ্চলে এখনো জলাশয় বনভূমির দুটি ছোট অংশ বিদ্যমান আছে যাদের একটি চাতলা বিলে এবং অপরটি কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের নিকটে। এই দুইটি ক্ষুদ্র জলাশয় বনভূমি ব্যাতিরেকে হাকালুকি হাওরের চারিদিকের উদ্ভিদসমূহ অনুপম। এটা জলাশয় বন ও মিশ্র চিরসবুজ বৃষ্টি প্রধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের জঙ্গল উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। খড় দিয়ে ছাওয়ার উপকরণ এই অঞ্চলের সবচেয়ে উপকারী প্রাকৃতিক আর্দ্রভূমির উৎপন্ন দ্রব্য। 

হাওর ব্যবস্থা আঞ্চলিক ও বাংলাদেশের জনগণকে অর্থনৈতিক ও অর্থনৈতিক নয় এমন বিস্তীর্ণ সুবিধা প্রদান করে। মৎস্য উৎপাদন, ধান উৎপাদন, গরু, ছাগল ও মহিষ পালন, হাঁস পালন, নলখাগড়া ও ঘাস সংগ্রহ এবং জলজ ও অন্যান্য উদ্ভিদ সংগ্রহ এদের অন্তর্ভুক্ত। হাওর ব্যবস্থা এপ্রিল-মে মাসে সংঘটিত আকস্মিক বন্যার হাত থেকে নিচু প্লাবন সমভূমিকে রক্ষা করে, অন্যান্য নিচু জলাশয়ের মাছের সরবরাহ বজায় রাখে এবং অতিথি ও স্থানীয় জলচর পাখিদের বাসস্থানের যোগান দেয়। 

অনুপম হাওর ব্যবস্থা বর্ষা ও শুকনো উভয় ঋতুতে স্থলভাগের দৃশ্যের সৌন্দর্য বর্ধনে অবদান রাখে। বর্ষাকালে এর অপরূপ সৌন্দর্য একে একটি বিশাল প্রাকৃতিক জলাধারে পরিণত করে এবং শুকনো মৌসুমে এটা বিলের ছোট ছোট অংশসহ একটি বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসজমিতে পরিণত হয় যা অতিথি পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র। এই অপূর্ব প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ