মুফতি কাওছার হোছাইন
আল্লাহ তাআলার নিকট মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। পৃথিবীর বুকে একমাত্র শান্তির ধর্ম ইসলাম। যাতে নেই কোন ধরণের সংকীর্ণতা ও লাগামহীন স্বাধীনতা নেই। নেই এমন কোন আদেশ যা পালন করা দুষ্কর এবং নেই এমন কোন নিষেধ, যা বর্জন করা অসম্ভব। বরং তাতে রয়েছে সহজতা ও পূর্ণতা এবং ব্যাপকতা ও কোমলতা। কিন্তু ইসলামি রীতি-নীতি ও সংস্কৃতিকে অবহেলার ফলে মুসলিমদের মাঝে ইহুদী, খ্রিস্টান, মুশরিক ও বিভিন্ন অমুসলিমদের সীমাহীন অপসংস্কৃতি ও অসভ্যতা অনুপ্রবেশ করেছে, যার অন্যতম হলো প্রাণীর ছবি আঁকা, তোলা এবং ভাষ্কর্য ও মূর্তি নির্মাণ করা। তাই এই বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সংক্ষেপে কিছু বিধি নিষেধ উল্লেখ করা হলো।
♦প্রাণীর ছবি আঁকা, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করার বিধান:
শরীয়তের দৃষ্টিকোণে কোন প্রাণীর ছবি আঁকা, সংরক্ষণ করা ও প্রদর্শন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে,
عن مسلم، قال كنا مع مسروق في دار يسار بن نمير، فرأى في صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبي ﷺ يقول إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون
মুসলিম রহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরূকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরূক ইয়াসারের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. থেকে শুনেছি এবং তিনি নবীকে বলতে শুনেছেন যে, (ক্বিয়ামাতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে। তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।১
عن أبي طلحة ، رضي الله عنهم . قال قال النبي ﷺ " لا " تدخل الملائكة بيتا فيه كلب ولا تصاوير ".
হযরত আবু তালহা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।২
عن ابن عباس سمعت محمدا ﷺﷺ يقول " من صور صورة في الدنيا كلف يوم القيامة أن ينفخ فيها الروح، وليس بنافخ "
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে কেউ দুনিয়াতে কোনো প্রতিকৃতি তৈরি করবে তাকে কিয়ামতের দিন বাধ্য করা হবে যেন সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে, অথচ সে তা করতে সক্ষম হবেনা।৩
حدثنا حماد بن زيد عن أيوب عن نافع عن ابن عمر قال قال النبي ﷺ إن أصحاب هذه الصور يعذبون يوم القيامة ويقال لهم أحيوا ما خلقتم
ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন- “এসব ছবি নির্মাতাদেরকে ক্বিয়ামাতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছ, তাকে জীবিত কর।”৪
عن عائشة أم المؤمنين أن أم حبيبة وأم سلمة ذكرتا كنيسة رأيتها بالحبشة فيها تصاوير فذكرنا للنبي فقال إن أولئك إذا كان فيهم الرجل الصالح فمات بنوا على قبره مسجدا وصوروا فيه تلك الصور فأولئك شرار الخلق عند الله يوم القيامة
হযরত আয়িশা রাযি. হতে বর্ণিত যে, উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালামা রাযি. হাবশায় তাঁদেও দেখা একটা গির্জার কথ, বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নবী সা. এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করেন “তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরি করে রাখতো। কিয়ামত দিবসে তারাই আল্লাহর নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে পরিগণিত হবে।”৫
حدثنا إبراهيم بن موسى أخبرنا هشام عن معمر عن أيوب عن عكرمة عن ابن عباس رضي ا الله عنهما أن النبي ﷺ لما رأى الصور في البيت لم يدخل حتى أمر بها فمحيت.
ইবনু আববাস রা. হতে বর্ণিত। নবী সা. যখন কাবা ঘরে ছবিগুলো দেখতে পেলেন, তখন যে পযর্ন্ত তাঁর নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না।৬
এছাড়া আরো অনেক হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের আছার, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন ও ফুকাহায়ে কেরামের কথা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কোন প্রাণীর ছবি আঁকা ও সংরক্ষণ করা বা প্রদর্শন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। ঠিক তেমনি কোন ব্যক্তির ছবি চাই সেটা কোন আলিম বা বুযুর্গের ছবি হোক না কেন নিজের সাথে বা ঘরে বরকত বা সৌন্দর্য কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা বা ঝুলিয়ে রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়িয তথা হারাম এবং শাস্তি ও অভিশাপযোগ্য কাজ।
♦ডিজিটাল মেশিনের দ্বারা প্রিন্টকৃত ছবি বা ফটোগ্রাফী:
বিজ্ঞ আলেমদের অনেকেই ডিজিটাল মেশিনের দ্বারা প্রিন্টকৃত ছবি বা ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এমনকি উপমহাদেশের প্রায় সকল আলেম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ফটোগ্রাফী এবং হাতে বানানো ছবি উভয়টি না জায়েয হওয়ার দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই। ছবি শুধু কলম, রং কিংবা এ জাতীয় পদার্থ দ্বারা কাগজ, কাপড় দেয়াল ইত্যাদির উপর হাত দ্বারা বানানো অথবা পাথর ইত্যাদি দ্বারা তৈরি ভাস্কর্যই নয়, বরং ওই সকল পদ্ধতিও ছবির অন্তর্ভূক্ত যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর স্পষ্ট আকৃতি কাগজ, কাপড়, দেয়াল ইত্যাদি এ জাতীয় কোনো বস্তুর উপর এমনভাবে অংকন করা যে, এ আকৃতি ওই বস্তুর উপর স্থির হয়ে যায়। চাই তা পুরাতন কিংবা নতুন যন্ত্রের মাধ্যমে হোক না কেন। যেমন non digital ক্যামেরার নেগেটিভ এর উপর অংকিত আকৃতি অথবা ফটোগ্রাফীর মাধ্যমে নির্মিত ছবি তথা প্রিন্টকৃত ছবি। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এটাই যে, যন্ত্রের পরিবর্তনের কারণে ফটোগ্রাফী এবং হাতে অংকিত ছবির হুকুমে কোন পার্থক্য ধরা হবেনা। বরং ক্যামেরার ছবি, ফটোগ্রাফিও প্রকৃত ছবির প্রকারসমূহের মধ্যে এক প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং হাতের দ্বারা ছবি অংকনের ন্যায় সম্পূর্ণ হারাম হবে।
♦ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবির বিধান:
বিজ্ঞ আলেমদের অনেকেই ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবিকেও প্রিন্টকৃত ছবি বা ফটোগ্রাফির মতো হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করেছেন। মুহাক্কিক আলেমগণের অপর একটি দলের মতে ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি প্রিন্ট করা না হলে তা হারাম ছবির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
তারা ব্যাখ্যা করে বলেন, কোনো আকৃতি বা প্রতিবিম্বকে ওই সময়ই ছবি বলা হয় যখন তা কোন কিছুর উপর স্থীর হয়। কিন্তু ভিডিও ক্যাসেট, সিডি USB হার্ডডিস্ক, ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত ডাটা ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে CD এবং Analog to digital converterএর সাহায্যে কোন wise (প্রতিবিম্বের) আলোকরশ্মী দ্বারা কিছু impormation গ্রহন করে থাকে। আর এই impormation ছবির আকৃতিতে সেখানে সংরক্ষিত হয় না, বরং ডিজিটাল কিছু সাংকেতিক চিহ্নের আকৃতিতে এমনভাবে সংরক্ষিত হয় যে, তা দেখাও যায় না পড়াও যায় না, এমনটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র এর মাধ্যমেও দেখা যায় না।
সুতরাং ভিডিও ক্যাসেট, সিডি ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত সাংকেতিক চিন্নসমূহ ছবি না হওয়াটা একেবারে স্পষ্ট। আর ভিডিও ক্যাসেট সিডি ইত্যাদি চালানোর পর স্ক্রীনে যা দৃশ্যমান হয় তাও ছবি নয় এজন্য যে, সেটি বাস্তবে Electronic signals বা digital ক্যামেরা অথবা digital মেশিনে বিদ্যমান এক বিশেষ device অথবা ABC এর সাহায্যে দেয়াল অথবা স্ক্রীন এর উপর অস্থায়ী আকৃতিতে প্রকাশিত হয়ে সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায়।
সুতরাং, এ সমস্ত দৃশ্যাবলী প্রিন্ট করার পূর্বে স্ক্রীন এর সীমার মধ্যে স্থায়ীভাবে কোথায় ও স্থীর হয় না, এজন্য এ সমস্ত দৃশ্যাবলী ছবির হুকুমে নয়।
♦মূর্তি ও ভাস্কর্যের হুকুম:
কোনো প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে কঠিন কবীরা গুনাহ ও হারাম । মূর্তি সংগ্রহ মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তিও বেচাকেনা ইত্যাদি সকল বিষয় কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। মূর্তিপূজার কথা তো বলাই বাহুল্য, মূর্তি নির্মাণেরও কিছু কিছু পর্যায় এমন রয়েছে যা কুফরি। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। এটা চরম ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোকেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদের স্পষ্ট নির্দেশ
فاجتنبوا الرجس من الأوثان و اجتنبوا قول الزور
“তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।”৭
এই আয়াতে পরিস্কারভাবে সবধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড বর্জন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে. উপরের আয়াতে সকল ধরনের মূর্তিকে (রিজস) শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। (রিস) অর্থ নোংরা ও অপবিত্র বস্তু। বোঝা যাচ্ছে যে, মূর্তির সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রুচিবোধের পরিচায়ক। অন্য আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-
و قالوا لا تذرن الهتكم ولا تذرن وذا ولا سواعا : ولا يغوث ويعوق ونسرا
“এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াউক ও নাসরকে”।৮
এখানে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে :
১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা।
২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা।
তাহলে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কুরআন মাজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত। অতএব এটা যে ইসলামে গর্হিত ও পরিত্যাজ্য তা তো বলাই বাহুল্য।
উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল ।৯
কুরআন মাজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে ধরা করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে,
رب إنهن أضللن كثيرا من الناس
“হে আল্লাহ! এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!"১০
কুরআন মাজীদে একটি বস্তুকে ভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হবে এরপর ইসলামী শরীয়তে তা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য থাকবে- এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কী হতে পারে। কুরআনের ভাষায় মূর্তি ও ভাস্কর্য হল বহুবিধ মিথ্যার উৎস। ইরশাদ হয়েছে-
إنما تعبدون من دون الله أونانا و تخلفون إفكاء
“তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর মিথ্যা”। ১১
মূর্তি ও ভাস্কর্য যেহেতু অসংখ্য মিথ্যার উদ্ভব ও বিকাশের উৎস তাই উপরের আয়াতে একে মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে, মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
হাদীস শরীফেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দান করেছেন। রাসুল বলেন,
" أرسلني بصلة الأرحام وكسر الأوثان وأن يوحد الله لا يشرك به شيء "
হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়েছেন। ১২
عن أبي الهياج الأسدي قال قال لي علي بن أبي طالب ألا أبعثك على ما بعثني عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم أن لا تدع تمثالا إلا طمسته ولا قبرا مشرفا إلا سؤيته
আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী রা. বলেন, “আমি কি তোমাকে এমন কাজে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ সা. আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা ভেঙ্গে ফেলবে”। ১৩
عن أبو زرعة، قال دخلت مع أبي هريرة دارا بالمدينة فرأى أغلاها مصورا يصـور، قال سمعت رسول اللہ ﷺ بقول " ومن أظلم ممن ذهب يخلق كخلقي، فليخلقوا حبة، وليخلقوا ذرة
" হযরত আবু যুর’আ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি আবু হুরায়রার রা. সাথে মদিনার একটি বাড়িতে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তিনি জনৈক ভাস্কর্য নির্মাণকারীকে ভাস্কর্য নির্মাণ করতে দেখলেন। তিনি বললেন, “আমি রাসুল কে বলতে শুনেছি, (আল্লাহ তাআলা বলেন) আর তার থেকে অধিক যালেম আর কে হতে পাওে যে আমার সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করতে চায়? সে যেন শস্য দানা সৃষ্টি করে দেখায়, সে যেন ক্ষুদ্র কণা সৃষ্টি করে দেখায়! "১৪
عن جابر بن عبد الله . * . أنه سمع رسول اللہ ﷺ يقول عام الفتح، وهو بمكة " إن الله ورسوله حرم بيع الخمر والميتة والخنزير والأصنام "
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় মক্কায় থাকা অবস্থায় এই ঘোষণা দিয়েছেন যে, “আল্লাহ ও তার রাসূল মদ ও মূর্তি এবং শুকর ও মৃত প্রাণী বিক্রি করা হারাম করেছেন”।১৫
কুরআন ও সুন্নাহের উপরোক্ত দলীলের আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ইসলাম কখনই কোন প্রাণীর ভাস্কর্য বা প্রতিমা নির্মাণ সমর্থন করে না। ভাস্কর্য-মূর্তি ও প্রতিমা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বেচাকেনা ইত্যাদি সকল বিষয় কঠিনভাবে নিষিদ্ধ যদিও তা উপাসনার উদ্দেশ্যে নির্মাণ না করা হয়ে থাকে। কারণ, এটি এমন মারাত্মক কবিরা গুনাহ যা মানুষকে শিরকের দিকে ধাবিত করে। আর আল্লাহ তাআলা শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। আল্লাহ তাআলা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।
___________________________________
১. সহিহ বুখারি- ৫৯৫০
২. সহিহ বুখারি- ৫৯৪৯
৩. সহিহ বুখারি- ৫৯৬৩
৪. সহিহ বুখারি- ৭৫৫৮
৫. সহিহ বুখারি- ৪২৭
৬. সহিহ বুখারি- ৩৩৫২
৭. সূরা হজ্ব- ৩০
৮. সূরা নূহ- ২৩
৯. সহিহ বুখারি- ৪৯২০
১০.সূরা ইবরাহিম- ৩৬
১১.সূরা আনকাবুত- ১৭
১২. সহিহ মুসলিম- ৮৩২
১৩. সহিহ মুসলিম- ৯৬৯
১৪. সহিহ বুখারি- ৭৫৫৯
১৫. সহিহ বুখারি- ২২৩৬
0 মন্তব্যসমূহ