রমাদান : ভালোবাসার মাসে অমীয় সুধা
তখনও নবুওতের আলো প্রস্ফুটিত হয়নি। মুহাম্মাদ (স.) কেবলই আল আমীন, নবীর মর্যাদায় ভূষিত হননি; হেরা গুহায় কাটিয়ে চলেছেন দিনরাত। এক অমোঘ আকর্ষণে পেরিয়ে যায় তার নীরব একাকী মুহূর্তগুলো। নাহ, ভুল হলো। যাঁর ধ্যানে, যাঁর অন্বেষণে তিনি ছিলেন তৃষ্ণার্ত; তাঁর প্রেমিকরা কখনো একা হতে পারে না। তিনি সব সময় তার আশ্রয় হয়ে থাকেন। হ্যাঁ! ঘোর আধারে নিমজ্জিত জাহেলী সমাজেও যে ক’জন গুটিকতক মানুষ তাওহীদের আলোয় আলোকিত ছিলেন, তাঁদের শিরোমণি ছিলেন আমাদের নবী।
Click for graphic design or WhatsApp - 01604371373
ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয় সকল আকুল হয়ে থাকে কখন আসবে ডাক প্রেমময়ের তরফ থেকে! ধ্যানে মগ্ন হৃদয়ের ধ্যান হঠাৎ চমকিত আনন্দে ভঙ্গ হবে পরম প্রিয়ের আহ্বান।
কিন্তু এত আচমকা? এত গভীর উচ্ছ্বাস নিয়ে? এত সম্মন, শ্রদ্ধা আর বিষ্ময় নিয়ে?
প্রভুর প্রথম ডাক হৃদয় ছড়িয়েছিলো এক অবিশ্বাস্য দ্যুতি, দেহে তুলেছিলো কাঁপুনি। কাঁপতে কাঁপতে তাই সঙ্গিনী খাদীজাকে বলেছিলেন, ’যাম্মিলু নী, যাম্মিলু নী....’, ’গায়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, গায়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও’....
কী ছিলো সেই ডাক? আকাঙ্খিত কথা? যার প্রথম ঝাঁকুনি ছিলো এত তীব্র?
তা হলো ইক্বরা- পড়ো
পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, এ তো ডাক নয়, শ্বাশ্বত অমীয় সুধা। যে সুধায় আজও তৃষ্ণা মিটিয়ে চলছে তৃষিত হৃদয়। মিটিয়ে যাবে কিয়ামত অব্দি।
কবে এসেছিলো পবিত্র সে সত্ত্বার পক্ষ থেকে সে আলোকবর্তিকা? পথচলার নির্দেশিকা?
রমাদানে। দ্বারে কড়াঘাত করছে যে বরকতময় মাস। সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজ থেকে পুরো কুরআন মাজীদ নিকটতম আসমানে নাযিল হয়েছে এই মাসে। দুনিয়ার আসমান থেকে আমাদের নবীর উপর প্রথম ওহীও নাযিল হয় এ মাসেই। আল্লাহ বলেন : রমাদান মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে মানুষের জন্য পথনির্দেশক, সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট নির্দেশিকা ও হক্ক-বাতিলের মাঝে বিভাজনকারীরূপে (সূরা বাকারা: ১৮৫)
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজেই স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, রমাদানে কুরআন নাযিল হয়েছে, তাই এ মাসে সওম পালন করো।
এ যেন কুরআনকে স্বাগত জানানো, কুরআনকে হুদানরূপে গ্রহণের অনুশীলন।
আল্লাহ উক্ত আয়াতে যদিও জানিয়ে দিয়েছেন সমগ্র মানবতার দিকনির্দেশনারূপে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। তাই বলে কি সবাই হিদায়াতরূপে গ্রহণ করে? করে না। হিদায়াতরূপে গ্রহণ করতে যোগ্যতা লাগে। সেই যোগ্যতার নাম তাকওয়া। তাই তো আল্লাহ সূরা বাকারার শুরুতে বলেন : ওই কিতাব - কোনো সন্দেহ নেই তাতে- মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত।
এই মাসে আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন, অপরদিকে কুরআনকে হুদানরূপে গ্রহণের জন্য সিয়ামের মধ্য দিয়ে তাকওয়া অর্জনেরও ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং রমাদানে মাসব্যাপি চলতে থাকুক তাকওয়া ও কুরআনের চর্চা। তাকওয়া ও কুরআন এমন গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় - কুরআনে যে দুটি বিষয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহ 'যথাযথ' শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো' | (সূরা আল-ইমরান:১০২)
তেমনি আল্লাহ বলেন, 'আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি আর তারা তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করে, তারাই এ কিতাবের প্রতি ঈমান রাখে। ' যথাযথ তিলাওয়াত মানে ধীরে ধীরে পূর্ণ মনোযোগের সাথে অর্থের প্রতি লক্ষ্য করে পড়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা। যথাযথ ঈমানের জন্য প্রয়োজন যথাযথ তিলাওয়াত। যথাযথ তিলাওয়াতের জন্য প্রয়োজন যথাযথ তাকওয়া। যথাযথ তাকওয়া নির্ভর করছে আপনি রমাদানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাচ্ছেন কিনা, রমাদানের সিয়াম যথাযথভাবে আদায় করছেন কিনা। ভালোবাসায় মোড়া এ মাস সব মাসের চেয়ে উত্তম। মোক্ষম সময় প্রভুর কাছাকাছি হওয়ার। ইবাদাতে ডুবে গিয়ে অপার্থিব আলো গায়ে মাখার। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
মুসলিমদের জন্য রমাদানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমাদান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। মুসনাদে আহমদ:৮৩৬৮
সেরা মাসে যবানে যবানে উচ্চারিত হোক অমীয় সে সুধা; জিহ্বা সর্বদাই সিক্ত থাকুক রবের দেয়া উপহারে-তাঁর যিকরে, তিলাওয়াতের সুমধুর সুরে।
0 মন্তব্যসমূহ