Recents in Beach

নামাজের সূন্নাত | Namajer sunnat

নামাজের ৫১টি সুন্নাত

ক) দাড়ানো অবস্থায় ১১টি সুন্নাত।
(১) উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা এবং উভয় পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল, উর্ধে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁক রাখা। (হিন্দিয়া, ১ঃ৭৩)
(২) হাত উঠানোর সময় মাথা না ঝুকানো বরং কিবলামুখী হয়ে সিজদার স্থানে নজর করে দাড়ানো। (হিন্দিয়া, ১ঃ৭৩)
(৩) উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো। অর্থাৎ উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের লতি পর্যন্ত উঠানো। (হিন্দিয়া, ১ঃ৭৩)
(৪) হাত উঠানোর সময় উভয় হাতের তালু কিবলামুখী রাখা। (তিরমিযী, ১ঃ৫৬)
(৫) অাঙ্গুল সমূহ স্বাভাবিকভাবে রাখা অর্থাৎ একেবারে মিলিয়েও না রাখা, অাবার বেশি ফাক ফাক করেও না রাখা। (হিন্দিয়া, ১ঃ৭৩)
(৬) ইমামের তাকবীরে তাহরিমা বলার পর সাথে সাথে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরিমা বলা। অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে- মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরিমা যেন ইমামের তাকবীরে তাহরিমারর পূর্বে শেষ না হয়। এরুপ হলে মুক্তাদীর নামাজ হবেনা। (নূরুল ইজা, ৫০)
(৭) হাত বাধার সময় ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রাখা। (হিন্দিয়া, ১ঃ৭৩)
(৮) ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলী দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা। (মারাকিল ফালাহ, ২০৮)
(৯) অবশিষ্ট তিন অাঙ্গুল বাম হাতের উপর স্বাভাবিক রাখা। (ফাতহুল ক্বাদীর, ১ঃ২৫০)
(১০) নাভীর নিচে হাত বাধা। (হিন্দিয়া, ১ঃ৭৩)
(১১) ছানা পড়া। (ই'লাউস সুনান, ২ঃ১৭৯)
খ) ক্বিরাতের সুন্নাত - ৭টি
(১) আ'উযুবিল্লাহ্ পড়া। (ই'লাউস সুনান, ২ঃ২৯)
(২) বিসমিল্লাহ পড়া। (ই'লাউস সুনান, ২ঃ২৯)
(৩) সূরা ফাতিহার পর নিরবে 'অামীন' বলা। (মারাকিল ফালাহ, ২১১)
(৪) ফজর এবং যোহরের নামাযে ত্বিওয়ালে মুফাস্সাল (লম্বা কিরাত) অর্থাৎ সূরাহ 'হুজুরাত' থেকে সূরাহ 'বুরুজ' পর্যন্ত, আসর এবং ইশার নামাজে আওসাতে মুফাস্সাল (মধ্যম কিরাত) অর্থাৎ সুরা 'ত্বারিত' থেকে সূরা 'বায়্যিনাহ' পর্যন্ত এবং মাগরিবের নামাজে ক্বিসারে মুফাস্সাল (ছোট কিরাত) অর্থাৎ সূরা 'যিলযাল' থেকে সূরা 'নাস' পর্যন্ত বা কুরআনের যে কোন স্থান থেকে এই পরিমাণ পাঠ করা। (ই'লাউস সুনান, ৪ঃ৩১)
(৫) ফজরের প্রথম রাকাত দ্বিতীয় রাকাত অপেক্ষা লম্বা করা। অন্যান্য ওয়াক্তে উভয় রাকাতেন কিরাত সমান রাখা উচিত। (ই'লাউস সুনান, ৪ঃ২১)
(৬) কিরাত অত্যন্ত দ্রুত বা ধীরে না পড়া; বরং মধ্যম গতিতে পড়া। (৪ঃ৪৬৩)
(৭) ফরজ নামাজের ৩য় এবং ৪র্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পাঠ করা। (মারাকিল ফালাহ, ২১৫)
গ) রুকুর সুন্নাত ৮টি
(১) তাকবীর বলা অবস্থায় রুকুতে যাওয়া। (মুসলিম, ১ঃ১৬৯)
(২) উভয় হাত দ্বারা হাটু ধরা। (বুখারী, ১ঃ১০৯)
(৩) হাতের আঙ্গুলসমূহ ফাক করে ছড়িয়ে রাখা। (ই'লাউস সুনান, ৪ঃ৩১)
(৪) উভয় হাতসম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাকা না রাখা। (মিশকাত, ১ঃ৭৬)
(৫) পায়ের গোছা হাটু ও উরু সম্পুর্ণ সোজা রাখা। হাটু সামনে বা পিছনে বাকা না রাখা। (মারাকিল ফালাহ, ২১৫)
(৬) মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা এবং পায়ের দিকে নজর রাখা। (বুখারী, ১ঃ১০৯)
(৭) রুকুতে কমপক্ষে ৩বার রুকুর তাসবীহ سبحان ربی العظيم পাঠ করা। (মারাকিল ফালাহ, ২১৪)
(৮) রুকু হতে উঠার সময় ইমামের سمع اللہ لمن حمدہ বলার পর মুক্তাদীর ربنا لک الحمد এবং একাকী নামাজ আদায়কারী উভয়টি পাঠ করা। (আলমগীরি ১ঃ১১০)
বি:দ্র: রুকু থেকে উঠে সম্পুর্ণ সোজা স্থির হয়ে দাড়ানো।
ঘ) সিজদার সুন্নাত ১২টি
(১) তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। (মুসলিম, ১ঃ১৬৯)
বি:দ্র: সিজদায় যাওয়া ও সিজদা হতে দাড়ানোর সময় তাকবীর এক আলিফ থেকে অধিক টানা উচিত নয়। অবশ্য হদর এবং তারতীলের পার্থক্য থাকবে। (শামী,১ঃ৪৮০)
(২) প্রথমে উভয় হাটু মাটিতে রাখা। (তিরমিজী,১ঃ৬১)
(৩) তারপর হাটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমুহ কিবলামুখী করে সম্পুর্ণ রূপে মিলিয়ে রাখা। (ই’লাউস সুনান,৩ঃ১৩)
(৪) তারপর বৃদ্ধাঙ্গুলীর মাথা বরাবর নাক রাখা। (মারাকিল ফালাহ,২১৬)
(৫) তারপর কপাল রাখা। ( ই’লাউস সুনান,১ঃ১৬)
(৬) অতঃপর মুখমন্ডল রেখে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। (মারাকিল ফালাহ,২১৬)
(৭) সিজদায় পেট উরু থেকে পৃথক রাখা। (বুখারী,১ঃ৫৬)
(৮) পাজরদ্বয় থেকে উভয় বাহু পৃথক রাখা।(বুখারী,১ঃ৫৬)
(৯) কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। (বুখারী,১ঃ৫৬)
(১০) সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবীহ পাঠ করা। (ইবনে মাজা,৬৩)
(১১) তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদা হতে মাথা উঠানো। (মারাকিল ফালাহ,২১৬)
(১২) প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু উঠানো। (মারাকিল ফালাহ,২১৬)
বি:দ্র: রুকু থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় হাটু মাটিতে লাগার আগ পর্যন্ত বুক সম্পুর্ন সোজা রাখা জরুরী। বিনা ওজরে বুক ঝুকিয়ে সিজদায় গেলে সুন্নাতের খেলাফ হবে। দু’সিজদার মাঝে কমপক্ষে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থির হয়েবসা জরুরী। (শামী,১ঃ৪৬৪)
ঙ) নামাযে বসার সুন্নাত ১৩টি।
(১) বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। ডান পা সোজাভাবে খাড়া রাখা। উভয় পায়ের আঙ্গুল সমূহ সাধ্যমত কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা। (ইবনে মাজাহ, ৬৫)
(২) উভয় হাত রানের উপর হটু বরাবর করে রাখা এবং দৃষ্টি কোলের দিকে রাখা। (ইবনে মাজাহ, ৬৫)
(৩) ’আশহাদু’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলীর মাথা এক সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলীদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং ’লা-ইলা-হা’ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর ’ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙ্গুলের মাথা সামান্য ঝুকানো। তবে হাটুর সাথে না লাগিয়ে রাখা। (রদ্দুল মুহতার,১ঃ৪৭৬)
(৪) আখেরী বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দুরুদ শরীফ পড়া। (ইবনে মাজাহ, ৬৫)
(৫) দুরুদ শরীফের পর দোয়ায়ে মাছুরা পড়া। (ইবনে মাজাহ, ৬৫)
(৬) উভয় সালাম ফিরানো। (আবু দাউদ, ১ঃ১৪৩)
(৭) ডান দিকে আগে সালাম ফিরানো। উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে আরম্ভ করা এবং সালামের সময় দৃষ্টি কাধের দিকে রাখা। (তিরমিজী, ১ঃ৬৬)
(৮) ইমামের উভয় সালামে মুক্তাদী, ফেরেশতা ও জি¦নদের প্রতি সালাম করার নিয়্যাত করা। (আদ-দুররুল মুখতার, ১ঃ৭৮)
(৯) মুক্তদীগনের উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লী, ফিরিশতা ও নামাযী জি¦নদের প্রতি সালাম করার নিয়্যাত করা। (আল-বাহরুর রায়িক, ১ঃ৩৩২)
(১০) একাকী নামাযী ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাগণের প্রতি সালাম করার নিয়্যাত করা। (অদ-দুররুল মুখতার, ১ঃ৭৯)
(১১) মুক্তদীগণের ইমামের সাথে সালাম ফিরানো। (শামী, ১ঃ৪৭৭)
(১২) দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম অপেক্ষা আস্তে বলা। (হি›দিয়া, ১ঃ৭৬)
(১৩) ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শেষ হলে মসবূকের ছুটে যাওয়া আদায়ের জন্য দাড়ানো। (শামী, ৫৯৮)
চ) মুনাজাতের সুন্নাত ১০টি
(১) মুনাজাতের শুরুতে আল্লাহ পাকের প্রশংসা করা এবং রাসূল (সা.)-এর উপর দুরূদ পাঠ করা। (মিশকাত, ৮৬)
(২) উভয় হাত সিনা বরাবর উঠানো। (কানযুল উম্মাহ, ১ঃ৬২২)
(৩) হাতের তালু আসমানের দিকে প্রসস্ত করে রাখা। ( রদ্দুল মুহতার, ১ঃ৪৭৪)
(৪) হাতের আঙ্গুল সমুহ স্বভাবিক ফাঁক রাখা। (হিসনে হাসীন, ২৭)
(৫) দু’হাতের মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখা। (ত্ব্হতাবী, ১৭৩)
(৬) মন দিয়ে কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করা। (সূরা আ’রাফ,২০৫)
(৭) আল্লাহ পাকের নিকট দোয়ার বিষয়টি বিশ^াস ও দৃঢ়তার সাথে বারবার চাওয়া। (ইবনে মাজাহ, ২৭৪)
(৮) নিঃশব্দে দোয়া করা মুস্তাহাব। তবে দোয়া সম্মিলিতভাবে হলে এবং কারো নামাযে বা ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলে, সশব্দে দোয়া করাও জায়েয আছে। (সূরা আ’রাফ,২০৫)
(৯) আল্লাহ ত’আলার প্রশংসা, দুরূদ শরীফ ও আমীন বলে দোয়া শেষ করা। (তিরমিজী, আবু দাউদ, মিশকাত-৮৬)
(১০) মুনাজাতের পর হস্তদ্বয় দ্বরা মুখমন্ডল মুছে নেয়া। (মিশকাত-১৯৫)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এগুলো আমল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ