প্রথম মহাযুদ্ধে তুরস্ক-জার্মান ‘অক্ষ শক্তি' গ্রেট ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন ‘মিত্রশক্তির’ নিকট পরাজিত হয়। বিশ্বযুদ্ধ শেষে গ্রেট ব্রিটেন ও মিত্রশক্তি তুরস্ক সাম্রাজ্যকে খণ্ড-বিখণ্ড করে এর শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা তুরস্ককে ১৯২০ সালে সম্পাদিত 'স্যাভার্স চুক্তি' স্বীকার করতে বাধ্য করে। এ চুক্তি ছিল তুরস্কের জন্য অপমানজনক। এর প্রতিবাদে ১৯২০ সালে ভারতীয় মুসলমান জনগণ আন্দোলন শুরু করেন। কেননা ভারতীয় মুসলমান জনগণ তুরস্কের সুলতানকে সমগ্র মুসলিম জাহানের খলিফা ও ঐক্যের প্রতীক বলে মনে করতো। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এ আন্দোলন 'খিলাফত আন্দোলন' নামে পরিচিত। খিলাফত আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের 'অহিংস অসহযোগ আন্দোলন' শুরু হয়। গান্ধীজী খিলাফত আন্দোলনের প্রতিও তাঁর সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এর ফলে খিলাফত আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। গান্ধীজী খিলাফত আন্দোলনেরও অন্যতম প্রধান নেতায় পরিণত হন। ১৯২১ সালের ৫ নভেম্বর কংগ্রেস 'আইন অমান্য আন্দোলন' শুরু করলে অহিংস আন্দোলন দ্রুত সহিংস রূপ ধারণ করতে থাকে। ১৯২২ সালে উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের নিকটবর্তী চৌরিচৌরা নামক স্থানে আন্দোলনরত জনতার উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ একটি ঘরের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। ক্ষিপ্ত জনতা ঐ ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে ৫ ফেব্রুয়ারি একজন দারোগাসহ ২২ জন পুলিশের মৃত্যু ঘটে। গান্ধীজী আন্দোলনের এ সহিংসরূপ দেখে মর্মাহত হন এবং আকস্মিকভাবে ১৯২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বারদৌলীতে কংগ্রেসের কার্যকরী সভায় আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ সময় তুরস্কের বিপ্লবী নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেন। ১৯২৩ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি তুরস্ককে ‘প্রজাতন্ত্র' ঘোষণা এবং 'খিলাফত' তথা 'তুরস্ক সালতানাতকে' বাতিল ঘোষণা করেন। এর ফলে ১৯২৪ সালে ভারতে খিলাফত আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। খিলাফত আন্দোলন ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলনের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে এবং মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা অর্জন করে।
0 মন্তব্যসমূহ