রমজানের প্রস্তুতির মাস শা'বান: হাদীসের দৃষ্টিকোণ
أخبرنا عمرو بن علي عن عبد الرحمن قال حدثنا ثابت بن قيس أبو الغصن شيخ من أهل المدينة قال حدثني أبو سعيد المقبري قال حدثني أسامة بن زيد قال قلت يا رسول الله لم أرك تصوم شهرا من الشهور ما تصوم من شعبان قال ذلك شهر يغفل الناس عنه بين رجب ورمضان وهو شهر ترفع فيه الأعمال إلى رب العالمين فأجب أن يرفع عملي وأنا صائم
অনুবাদ:
ইমাম নাসায়ী রহ. বলেন: আমাদেরকে আমর ইবনুল আলি সংবাদ দিয়েছেন, তিনি আব্দুর রহমান হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমাদেরকে সাবেত ইবনে কায়েস (কুনিয়াত আবুল গুসন, তিনি মদিনাবাসীদের একজন শায়েখ) হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমাকে আবু সাইদ আল-মাকবুরি হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমাকে ওসামা ইবনে যায়েদ হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমি আপনাকে তো শা'বান মাসে যে পরিমাণ সওম (রোযা) পালন করতে দেখি রমজান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে সে পরিমাণ সাওম পালন করতে দেখি না। তিনি বলেন, শা'বান মাস রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যে মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ খবর রাখেনা অথচ এ মাসে আমলনামা সমূহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকটে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমার আমলানামা আল্লাহ তা'য়ালার নিকটে উত্তোলন করা হবে আমার সওম পালনরত অবস্থায়।
বর্ণনাসূত্র: অত্র হাদিসখানা ইমাম নাসায়ী রহ. তার সংকলিত কিতাব সুনানুন নাসায়ীতে বর্ণনা করেছেন। হাদিস নং- ২৩৫৬।
সনদ বিশ্লেষণ: আলোচ্য হাদিসখানায় মোট পাঁচজন রাবি রয়েছেন । যথা: ১. আমর ইবনুল আলি, ২. আব্দুর রহমান, ৩. সাবেত ইবনু কায়েস, ৪. আবু সাইদ আল মাকবুরি, ৫. ওসামা ইবনু যায়েদ। ১
১. আমর ইবনুল আলি: দশম স্তরের একজন নির্ভরযোগ্য রাবি। তাঁর উপাধি ফাল্লাস, উপনাম আবু হাফস, নিসবতি নাম সায়রাফী, বাসরি এবং বাহিলী। ইমাম নাসায়ী রহ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য, মুহাদ্দিস এবং হাফেজে হাদিস। তিনি ২৪৯ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
২. আব্দুর রহমান: নবম স্তরের একজন নির্ভরযোগ্য রাবি। উপনাম আবু সাইদ। নিসবতি নাম আনবারি। ইবনুল হাজার আসকালানী রহ. বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য, হাফেজে হাদিস এবং রেজাল ও হাদিস শাস্ত্রে অভিজ্ঞ। তিনি ১৯৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
৩. সাবেত ইবনু কায়েস: পঞ্চম স্তরের একজন নির্ভরযোগ্য রাবি। উপনাম আবুল গাসন। নিসবতি নাম গিফারি। ইবনে হাজার আসকালানরী রহ. বলেন, তিনি সত্যবাদী, ধারণা করে হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি ১৬৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
৪. আবু সাইদ আল-মাকবুরি: দ্বিতীয় স্তরের একজন নির্ভরযোগ্য রাবি নাম কায়সান, উপনাম আবু সাইদ, নিসবতী নাম মাকবুরি, মাদানী, লাইসি। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন তিনি নির্ভরযোগ্য। তিনি ১০০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
৫. ওসামা ইবনু যায়েদ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসিদ্ধ সাহাবি। তার উপাধি উসাইম, জুল বাতিন। উপনাম আবু মুহাম্মাদ ও আবু যায়েদ। নিসবতি নাম কালবী ও মাদানী। তিনি হিব্বুর রাসুল (রসুলের প্রিয়) এবং ইবনু হিব্বুহু ( প্রিয়র ছেলে প্রিয়) হিসেবে পরিচিত। তিনি ৫৪ বা ৫৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
হাদিসের হুকুম: হাদিসটি হাসান
ভূমিকা: অবসর সময়কে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করা এবং আল্লাহর অবধারিত ইবাদাত পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা মোমেনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র রজব মাসের পর আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে শা'বান মাস। এর পরেই আসবে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ পবিত্র রমজান মাস। এই মাসটি মূলত রমজানের প্রস্তুতির মাস। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী সালফে সালেহীন শা'বান মাসে নানা ইবাদত বন্দেগীতে মাশগুল থাকতেন, বিশেষ করে শা'বানের ১৫ তারিখ রাতে। এ মাসের ফজিলত সহীহ হাদিস সমূহে গুরুত্বসহকারে বর্ণিত হয়েছে, যাতে প্রমাণিত হয় রমজানের পরে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস হল শা'বান ।
হাদিসের ব্যাখ্যা: মহানবী সা. রমজান মাস বাদে শা'বান মাসে সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। এ মাসে মানুষের আমলনামা মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থাপিত হয়, অপরদিকে এ মাসের পরে আসে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ রমজান মাস। রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ প্রতিটি মু'মিনের উপর অপরিহার্য। যে কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইতেন মু'মিন যেন এই মাসে ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে এবং উত্তম আমলের মাধ্যমে মাসটি অতিবাহিত করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই চাইতেন তাঁর আমলসমূহ রোজাদার অবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালার কাছে উপস্থাপিত হোক। মূলত প্রতিদিন আল্লাহর দরবারে মু'মিনের আমলনামা উপস্থাপিত হয়, তবে প্রতি সপ্তাহের আমলনামা সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং প্রতি বছরের আমলনামা শা'বান মাসে উপস্থাপিত হয়।
👉[হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা]শা'বান মাসের আমল সমূহ:
অত্র হাদিসটি দ্বারা আমরা শা'বান মাসে নেক আমলের উৎসাহ পাই। যেমন,
১. রোজা রাখা: শা'বান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা বিশেষ করে আইয়ামুল বিজ অর্থাৎ ১৩,১৪ এবং ১৫ তারিখে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يا أبا ذر ! إذا صمت من الشهر ثلاثة أيام فصم ثلاث عشرة وأربع عشرة وخمس عشرة
“হে আবুযর তুমি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাইলে, ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে তিনটি রোজা রাখ। ২
২. রাত জেগে ইবদাত করা: এ মাসে প্রতি রাতে ইবাদত করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ বিশেষ করে ১৫ তারিখ রাতে ইবাদত করা।
৩. মাগফিরাত কামনা করা: হাদিস শরিফে এ মাসে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়ার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
৪. শুনাহ পরিত্যাগ করা: সব ধরণের গুনাহ বিশেষ করে কবিরাহ গুনাহ পরিত্যাগ করা শা'বান মাসের অন্যতম আমল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'য়ালা মধ্য শা'বানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।৩
৫. কুরআন তেলাওয়াত করা: শা'বান মাসে নেক আমলের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। নেক আমলের অন্যতম হল কুরআন তেলাওয়াত। হাদিস শরিফে এসেছে।
من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة والحسنة بعشر أمثالها لا أقول ألم حرف ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف
যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালার কিতাবের একটি হরফ পাঠ করবে তার জন্য সওয়াব আছে। আর সওয়াব হবে দশগুন হিসেবে। আমি বলিনা যে, আলিফ-লাম একটি হয়, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।
______________________________
১. তাকরিবুত তাহজিব।
২. সুনানুত তিরমিজি, হাদিস নং- ৭৬১
৩. সুনানু ইবনে মাজা, হাদিস নং- ১৩৯০
0 মন্তব্যসমূহ